-Advertisement-

বাঙালি আজও সর্বত্র বিদ্যমান, হতাশার কোনো কারণ নেই |

বাঙালিদের  প্রতিষ্ঠা এবং আজকাল দেশ বিদেশে জাতির অবস্থান নিয়ে যখন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা চিন্তাভাবনা করার জন্য একত্রিত হয়ে, তখন আমরা আগামী যুগের অপেক্ষায় আশাবাদী হতেই পারি। রবিবার, ১৭ জানুয়ারী তে দিল্লীর বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত আলোচনা সভা ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাঙালি- কাল, আজ ও কাল’ এমনি এক ইতিবাচক পথ দেখালো উপস্থিত শ্রোতৃমণ্ডলীকে। বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সেনগুপ্ত যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন আশাতীত আলোর অন্বেষণে এবং বাঙালিদের আসন্ন সংকটের বিশ্লেষণে, তা নানা বক্তার বক্তব্য আর মন্তব্যে এক ফলপ্রদ দিকনির্দেশ দিল এই আলোচনা সভাকে । প্রসার ভারতী’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা  জহর সরকার নিজের  বিবৃতিতে বলেন যে নানা কর্মকুশলতায় বাঙালি নিজের দক্ষতার প্রমান দিয়েছেন। ওনার উক্তি,”বাঙালিরা বাঙালিদের জন্য কিছু করেনা” বেশ কিছু প্রতিবাদের স্বর তুললেও, সার্বিক বুদ্ধিগত দক্ষতা দিয়ে জহর সরকার বুঝিয়ে দেন যে প্রত্যেক কে আশাবাদী হতেই হবে।

“বাঙালিরা বাঙালিদের জন্য কিছু করেনা”

দিল্লি ইউনিভার্সিটির বরিষ্ট প্রফেসর বিদ্যুত চক্রবর্তী ক্রমাগত ভারসাম্যহীন শিল্পায়নের দিকে  ইঙ্গিত করলেও, স্বীকার করলেন যে বাঙালিরা সর্বত্র বিদ্যমান। প্রত্যেক বক্তার কথায় উঠে এলো এক শুন্যতার কথা কিন্তু তা যে স্থায়ী হতে পারেনা, এই কথাও জোর দিয়ে বললেন উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা।  লেখিকা এবং সরকারের নারী ও শিশু বিভাগের সচিব অনিতা অগ্নিহোত্রী বলেন যে লিটল ম্যাগাজিনে আর নানা ছোট বড় কাগজে অনেক নতুন লেখকরা লিখছেন এবং তাদের অসাধারণ লেখনী এক শ্রেনীর পাঠকদের অবশ্যই টানছে।  নতুন প্রকাশকরাও এগিয়ে আসছে তাদের সমসাময়িক উদ্ভাবনী ভাবনা নিয়ে, লেখাগুলো পাঠকদের কাছে পৌছে দিতে।
আত্মসমালোচনার ও আত্মচিন্তনের দরকার তা সম্ভবত প্রত্যেক জাতির উত্থানের জন্য প্রয়জনীয়। বাঙালি পিছিয়ে পরছে, এই কথার উপযোগিতা মন্থন করার জন্য যথাযত এই প্রকারে আলোচনা সভা। সেই উপযোগিতার রেশ ধরেই চুনি গোস্বামী, অনিতা অগ্নিহোত্রী এবং শমিক বন্দোপাধ্যায়’রা একমত যে বাঙালিরা খেলা, সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতি অথবা শিক্ষার ক্ষেত্রে এখন এগিয়ে। আজকের সমাজ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সমীকরণে বাঙালিদের স্থান আরও বিস্তারিত হয়েছে। বাঙালি বলতে শুধু পশ্চিম বঙ্গ নয়, বাংলাদেশের বাঙালীদের ও যে একটি বিশেষ স্থান আছে, তা আমাদের ভুললে হবেনা।
শিল্প ও নাট্য সমীক্ষক শমিক বন্দোপাধ্যায় এই বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে জানান যে শিল্পকলার মাপদণ্ড শুধুমাত্র বানিজ্যিক সাফল্য হতে পারেনা। আজকাল মফঃশল থেকে নাটকের দলগুলো উঠে আসছে অনেক প্রকারের নতুন চিন্তাধারা নিয়ে যা কলকাতার তথাকথিত বিখ্যাত দলগুলো পারছেনা।

শিল্পকলার মাপদণ্ড শুধুমাত্র বানিজ্যিক সাফল্য হতে পারেনা। আজকাল মফঃশল থেকে নাটকের দলগুলো উঠে আসছে অনেক প্রকারের নতুন চিন্তাধারা নিয়ে

সমবেত প্রচেষ্টা এই দলগুলো কে সাফল্যের দোরগোড়ায় এনেছে যেখানে কলকাতার অনেক নাট্যগোষ্ঠী এখনো অভিনেতা কেন্দ্রিক নাটকে বিশ্বাস করছে। খেলায় বাঙালিদের অবস্থানের কথা জানিয়ে বিখ্যাত ফুটবলার চুনি গোস্বামীর অভিভাষণে ফুটে ওঠে আশার আলো।.সম্প্রতি সাফ গেমস জেতা ভারতীয় ফুটবল দলে সাতজন বাঙালি ফুটবলার নিজেদের স্থান অর্জন করেছে, এই কথা মনে করিয়ে দেন চুনি গোস্বামী।
এই সুনিয়োজিত সেমিনারের প্রত্যেক বক্তার ধারণা যে আজ যদিও আমরা একটা পরিবর্তনশীল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, বাঙালিদের বিশেষ চিন্তা করার  কিছুই নেই কারণ আগামী প্রজন্ম নানা ক্ষেত্রেই ততোধিক প্রতিভাশালী। আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক গণ্ডি থেকে  বেরিয়ে দেশীয় বা বিশ্বস্তরে মান্যতা প্রাপ্ত করার জন্য অন্যান্য ভাষার সম্প্রদায়ে ও জাতির সাথে সমম্বয় সৃষ্টি করার  ক্ষেত্রেও বেশি জোর দেওয়ার প্রয়োজন।  নানাবিধ ক্ষেত্রে যে আজও বাঙালি প্রগতিশীল ও মূলস্রোতের এক অভিন্ন অংশ, এই সেমিনার  সেই কথাই আবার দৃঢ়তার সাথে মনে করিয়ে দিল।

-Advertisement-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here