আমিষ-নিরামিষ একই ফ্রিজের একই ফ্লোরে থাকলে একটু ছোঁয়া তো লাগবেই। তাই না? আকাশের মা-র তাতে প্রবল সমস্যা। উপায় হিসেবে ভাবা হলো, আলাদা একটি পুঁচকে ফ্রিজ হবে, যাতে থাকবে নিরামিষ। এবং দুটি ফ্রিজ যেন একে ওপরের থেকে অন্ততপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বে থাকে। কিন্তু যদি নিরামিষ ফ্রিজের পাশে বসে আমিষ হাঁচি আসে? যদি নিরামিষের ফ্রিজের ভিতরকার বাটির ওপর লাগিয়ে রাখা ভেজ-আইডেন্টিফিকেশন-নেইলপলিশ- মার্ক আচমকা উঠে যায়? যদি নিরামিষের ফ্রিজের ওপর কোনো গেস্ট এসে মটন-বিরিয়ানি খাওয়া কব্জিটা রেখে ফেলে?
গত কয়েকমাস ধরে এই সব সম্ভাবনার কথা আকাশের মা কে বোঝাতে, উনি অবশেষে ঠিক করেছেন, একটি ফ্রিজই থাক। ওই নিরামিষের আগের দিন একটু মুছে নিলেই হবে। যতই হোক, আমিষ-নিরামিষ, খাদ্য বই আর কিছু তো নয়। ঠিক যেমন, যে দেশে কোনো একটি সরকারী ভাষা নেই (“একটি” শব্দটির ওপর জোর দেবেন), তখন একগাদা আশেপাশের ভাষার সাথে একটু ছোঁয়াছুঁয়ি তো হবেই। তাই না?
উত্তরে-দক্ষিণে-পশ্চিমে গিয়ে কি আর বাংলা বলা যাবে? ওখানে “জল খাতা হুঁ” -এর পাঞ্চ মারতেই হবে। অর্থাৎ আমাদের দেশের লোকজনকে একটু ককটেল হতেই হয়। তাছাড়া আন্তর্জাতিক আকর্ষণ মাধ্যাকর্ষণ -এর কারণেও পাঞ্চ আজকাল একেবারে প্রায়-আবশ্যিক হয়ে উঠেছে। অমনি বলবেন, “বাজে কেন বকছেন? দক্ষিণে তো ওরা দিব্বি নিজের ভাষাতেই কথা বলে।” তা বলে। আমেরিকার রাস্তাতেও তাদের একমাথা তেল চুপচুপে চুলে ফুলের মালা লাগিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। আপনি কি ধুতি-শাড়ি পড়েন? প্যারিসে গিয়ে পড়বেন?
ব্যাপার হলো, আপনার মন কি চায়? অন্য ভাষাকে করায়ত্ত করাতে দোষ কি? অবশ্যই নিজের ভাষাকে অপমান না করে। যারা অপমান করে, তাদের ওপর আমারও হেভি ইয়ে হয়। খুব লিখেছি, খিল্লি করেছি তাদের নিয়ে একসময়। কিন্তু এখন মনে হয় তাদের বলি,”ভালো হয়ে উঠুন তাড়াতাড়ি”। কারণ “শো অফ” একটা রোগ। ভাষা আরো অনেককিছুর মতোই সেটার শিকার। তা বাদ দিয়ে অন্য ভাষাতে অনুরাগ দোষের কি। এই দেখুন না আজকাল বাংলা লেখাতে আধুনিক লেখকরা মাঝে মাঝেই ইংরিজি ব্যবহার করেন, তাদের লেখা পড়তে ভালো লাগলেও পড়া বর্জন করবেন? (ডিসক্লেইমার: এই লেখা যা আপনি এখন পড়ছেন, তার সব কিছুই কাল্পনিক আর কেউ কোন মিল পেলে তা নিতান্তই কাকতালীয়)। সাধু থেকে চলিত হয়েছিল একসময়, তা নিয়েও মহাভারত কম হয়নি। চলিত থেকে এখন ককটেলিত হয়ে গেলেও বিচলিত হবেননা। এটাই নিয়ম। Heraclitus বলেছেন change is the only constant। যদি ইংরিজি না পড়তেন, সন্মান না করতেন, এই কোট টাও জানা হতো না।
আজ সারাদিন শুদ্ধ বাংলা বলে যেতে হবে নাকি! সে তো আবার ওই “শো অফ” বা ওই সিনেমা হলে “ও বাবা আবার উঠে দাঁড়াতে হবে” টাইপ জাস্ট একটা দায়। মাতৃ ভাষাটাকে দায় করে তুলবেন না। আমি বলি কি, অন্য ভাষা কথাতে-লেখাতে পাঞ্চ হচ্ছে হোক। আপনি যেটা চান, সেটাই করুন। চয়েস আপনার। তবে মানুষকে-কুকুরকে-ভিখিরিকে-অন্ধকে যেমন অপমান করা ঠিক না, তেমনি ভাষাকেও না। নিজের ভাষাকে তো একেবারেই না।
মন দিয়ে বাংলাকে ভালোবাসছে দেখুন ওই লোকটা। রাশিয়ার পাতাল রেলে বসে অফিস ফেরত লোকটা “জয় গোস্বামী “পড়ছেন।
জয় বাংলা।
জয় বাঙালি।