মেজোমামার বিয়েতে তার সাথে প্রথম দেখা। না ঠিক দেখা নয়। আড়চোখে পলক ফেলে ফেলে নীল পাঞ্জাবি কালো ধুতি কে একটু বুঝে নেওয়া। কালো ধুতির চল সে সময় ছিলোনা। তাই সবার চোখই ছিল তার ওপর। নানারকম চাহুনি, যেমন “কি বোকা বোকা” “একি অদ্ভুত” “বাহ্ বেশ হাটকে তো” ছিল বটে। কিন্তু তাতে তাকে মোটেই অপ্রতিভ মনে হচ্ছিলো না। বরং যেন একটু বেশিই স্বচ্ছন্দ। আর তাতে আড়চোখ আরও বেশি করে তাকেই খুঁজতে লাগলো। তার চোখ দু-একবার আমার চোখকে একনোলেজ করেছিলো বটে তবে খুব দ্রুত। ইতিমধ্যে এই পুরো সাইলেন্ট টেলিফিল্মটা কখন যে আমার ভাই ট্র্যাক করতে শুরু করেছে জানি না। মালাবদলের ভিড়ে আমার কানের কাছে এসে বললো, “লাভ নেই। এনগেজড। আমাদেরই কোচিনের মেয়ের সাথে” .
“লাভ নেই। এনগেজড। আমাদেরই কোচিনের মেয়ের সাথে”
ড্যাম। চুরি করে ধরা পরে যাওয়া তাও আবার সে চোরাই মাল যদি অকেজো হয়। ফিলিংসটা ঠিক কেমন হয় বলুনতো! যাক চোখাচুখি নিয়ন্ত্রিত হলো তখুনি। সোনু নিগম হয়ে বিড়বিড় করলাম, জানা নাহি থা পিয়ার কি গলি মে।
প্রায় ৭-৮ মাস পরে, অক্সিজেনে তখন দূর্গা পূজার গন্ধ। নতুন জামার মসমস, নতুন জুতোর ফোস্কা, পুরনো বন্ধুর হৈচৈ, পুরনো রেস্টুরেন্টে নতুন মেনু সব চলছিল নিজের তালে। উলটোদিকের টেবিলে আমাদের মতোই আরেকদল, একইরকম হুল্লোড়ে মত্ত। শুধু মুখগুলোই অচেনা ….. উহু একটা মুখ তো ভীষণ চেনা। আরিব্বাস। নীল পাঞ্জাবি কালো ধুতি যে। আজ সাদা শার্ট নীল ডেনিম। আর সঙ্গে সঙ্গেই মাথা বলে উঠলো,”না না আর ও পথে না”। ব্যাস সোনু নিগম হয়ে বিড়বিড় করলাম, জানা নাহি থা পিয়ার কি গলি মে। কিন্তু ওপার থেকে ফোর জি নেটওয়ার্কের মতো শক্তিশালী চোখ যেন আমাকে ফলো করছে মনে হলো। ইগনোর করতে, মন দিলাম বিরিয়ানিতে।
সবে দু-চামচ মুখে দিয়ে বিরিয়ানিতে মেডিটেশন শুরু করেছি, ওমনি “হাই, ডু উই নো ইচ আদার ….. ” সাদা শার্ট নীল ডেনিম আর তার দলবল, চোখের সামনে। কতক্ষন হা করে ছিলাম মনে নেই। বাকি কি বলে গেলো, মনে নেই। আলাপচারিতার শুরু। সুতপা কনুই-এর গুঁতো মেরে বলেছিলো,”এই সেই? খবরদার। এনগেজেড কিন্তু।” এরকম সাবধান বাণী শুনে মনে হলো, যেন ও সাবধান না করলে আমি যে কোনো মুহূর্তে সাদা শার্ট নীল ডেনিমকে জড়িয়ে ধরবো। আশ্চর্য্য। তা সেই সাবধানবাণীর ঠেলায় বা বিরিয়ানি কন্সেন্ট্রেশনে বাঁধা পড়ায়, আলাপচারিতাতে কন্সেন্ট্রেট করতে পারিনি। আমি মূলত শ্রোতাই হলাম। শেষে অবাক করে দিয়ে সুতপা হঠাৎ নবমীতে ম্যাডক্স স্কোয়ারের প্ল্যান বানিয়ে বসলো। সুতপাকে বুঝতে পারে তার সাধ্য কার! আবার দেখা হওয়ার এক্সসাইটমেন্ট যে আমার মধ্যে একেবারেই ছিল না তা বলা ভুল। মাস্কারা লাগালাম একটু ঘন করেই। না না, আর কিছু না। একটা প্রেসেনট্যাবলে লুক তো দরকার নাকি!। তবে সুতপা-বুবাই দের সাথে বেরোলে কেন এ কথা মনে হয়না! ওরা ছোট্টবেলার বন্ধু বলে! ম্যাডক্স স্কোয়ারের আড্ডা তখন চরমে, সাদা শার্ট নীল ডেনিম আমার কানে ফিসফিস করে বললো, “হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে। কাল একবার লেকে মিট করা যায়? সেই বিয়ে বাড়ি থেকে ট্রাই করছি। না বললে শুনবো না কিন্তু।” হার্টবিট ১১০। আচ্ছা এমন বুক চিনচিন করে কেন বলুনতো যখন মাথা আর মন ঝগড়া করে? মাথার শত এলার্টকে মিথ্যে করে, দেখি না কি বলতে চায় শুনতে মন চললো দশমীর বিকেলে লেকের ধারে। পৌঁছনোর দু-কিলোমিটার আগেই এসএমএস,”নাহ সামনাসামনি বলার সাহস নেই। অতল, তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে। ক্যান ইউ হোল্ড মাই হ্যান্ড? ফর লাইফ?” মোবাইল থেকে চোখ তুলে মনে হলো আসেপাশের কিছু লোক হা করে দেখছে আমায়? খেয়াল করলাম আমার মুখটা এক গাল হাসিতে ভরে গেছে কখন আমার অজান্তেই! অক্সিজেনে এখন নীল পাঞ্জাবি কালো ধুতির গন্ধ। আশেপাশে লুকিয়ে আমায় দেখছে না তো? বাড়ি ফিরে ভাইকে একটা কিল মারবো ভাবছি।